স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সীমান্তবর্তী দু’উপজেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রানের দাবি ছিল উটতলী খেয়াঘাটের ওপর দিয়ে একটি সেতু ।
স্বাধীনতার পূর্বে থেকে উটতলী খেয়াঘাট দিয়ে দু’উপজেলার হাজার হাজার মানুষ দৈনিক এপার থেকে ওপারে নৌকা দিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। এতে বিশেষকরে চাকুরিজীবি,শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সময়মতো গন্তব্য স্থানে পৌছতে বেগ পেয়ে আসছে।
মানুষের চলমান দুর্ভোগে সেতু নির্মাণের জন্য প্রথমে নজরে আসে ফরিদগঞ্জের কৃতিসন্তান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.নুরুল আমিনের। পরবর্তীতে সেতু অনুমোদনে ফরিদগঞ্জের সংসদ সদস্য সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের সংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দেশের চলমান উন্নয়নে দু’উপজেলার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০ সালে ট্রেন্ডার প্রক্রিয়া যান। পরবর্তী বছরে উটতলী খেয়াঘাটের উপর সেতু নির্মাণের জন্য ঢাকা দোহারের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রেন্ডার পেয়েছেন।
কাজ ধরার পূর্বে সুরমা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো.আইয়ুব আলী ২০২২ সালের শুরুতে মালামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে আরো ৬০ কোটি টাকা বেশী বরাদ্দ বাড়ান। কিন্তু ১৬৭ কোটি টাকার বাজেট বৃদ্ধির পরেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দু’পাড়ের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,হাজীগঞ্জের সীমান্তবর্তী অলিপুর ও ফরিদগঞ্জের সীমান্তবর্তী ভাজপাড়ের মধ্যবর্তী উটতলী ডাকাতিয়া নদী।
ডাকাতিয়া নদীর উপর দিয়ে নৌকা যোগে দু’পাড়ের মানুষ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে। আর এতে করে দু’পাড়ের মানুষ জনপ্রতি যাওয়া ও আসার সময় ৫ টাকা করে ইজারাদারকে ও ৫ টাকা করে নৌকার মাঝিকে দিয়ে আসছে।
বিশেষ করে হাজীগঞ্জ অঞ্চলের অলিপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা উপারের মুন্সীরহাট মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজে আশা-যাওয়ার সময় দৈনিক নগদ টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ছাড়াও দু’ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে আসা যাওয়া সাধারন মানুষের বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে খেয়াঘাটে পারাপার অবস্থায় কথা হয় শিক্ষার্থী আলমগীর,সবুজ, লায়লা আক্তার, অলিপুর গ্রামের মোস্তফা, নূরজাহান,এরিনা রানীসহ একাধিক যাত্রীর সাথে।
তারা বলেন,‘আমরা জনপ্রতি নৌকা ভাড়া ৫ টাকা ও ঘাটের ইজারাদারকে ৫ টাকা মোট ১০ টাকা দিয়ে প্রতিবার পারাপারে খেসারত দিয়ে আসছি। ইতিপূর্বে চাঁদপুর থেকে শাহরাস্তি পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর উপর সবগুলো ব্রিজ বাস্তবায়ন হলেও সবচেয়ে বেশী জনগুরুত্বপূর্ণ উটতলী ব্রিজটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করছি।’
উটতলী খেয়াঘাটের ইজারাদার তাফাজ্জল হোসেন বলেন,‘এক সময় এ ঘাট দিয়ে দৈনিক কয়েক হাজার লোক পারাপার করতো। তখন ১ টাকা করে অনেক টাকা হতো। এ বছর ২ লক্ষ টাকার ইজারা নিয়ে হিমসিমে আছি। শুনেছি সেতু নির্মানের ট্রেন্ডার পেয়েছে সুরমা এন্টারপ্রাইজ,কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ ধরার কোন লক্ষণ দেখছিনা।’
ঠিকাদার সুরমা এন্টারপ্রাইজ এর ম্যানেজার কাইউম হোসেন বলেন,‘১০৭ কোটি টাকার বাজেট বাড়িয়ে আরো ৬০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে নানা কারনে। এ বছরের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’
উল্লেখ্য,এ সেতু বাস্তবায়ন হলে পাশ্ববর্তী উভারামপুর, বদরপুর,মুন্সীর হাটের নদীর তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ কিন্তু থেকেই যাবে। কারন তাদের পারাপারে অনেক পথ ঘুরে আসতে হবে।
২০২০ সালে ১ শ’৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদগঞ্জ-হাজীগঞ্জ এর ডাকাতিয়া নদীর ওপর উটতলী গুদারাঘাটে ৫ শ’৫০ মিটার ব্রীজ নির্মানে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলার দু’অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় তাদের মাঝে আনন্দের হাসি ফুঁটে ওঠে। তাই তারা অচিরেই সেতু নির্মাণের সঠিক বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী রেজায়ানুল ইসলাম বলেন,‘সুরমা এন্টারপ্রাইজ নানা জটিলা দেখিয়ে ডাকাতিয়া নদীর উপর আরো একটি সেতুর চলমান কাজ বন্ধ রেখেছে। উটতলী সেতু নির্মাণে তদারকির দায়িত্বে রয়েছে ফরিদগঞ্জ অফিস। এর পরেও কাজের গতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিবো।’