খেলাধুলা ডেস্ক : ওপেনার লিটন দাসের ঝড়ো ইনিংসের পরও ভারতের কাছে হারতে হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। জয়ের জন্য ১৮৫ রানের টার্গেটে ওপেনার হিসেবে ইনিংস শুরু করে ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন লিটন । ভারতের বোলারদের তুলোধুনো করে ২১ বলে লিটনের হাফ-সেঞ্চুরিতে ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর বৃষ্টি নামলে ম্যাচে ১৬ ওভারে ১৫১ রানের নতুন টার্গেট পায় বাংলাদেশ। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে দ্বিতীয় বলে লিটন রান আউট হতেই তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ। ৬৮ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ১০৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ তেকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা।
তারপরও শেষ দিকে নুরুল হাসান-তাসকিন আহমেদের লড়াই বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ৫ রানের হার থেকে রক্ষা করতে পারেনি। এই হারে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে বড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশ।
৪ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠলো ভারত। ৪ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানেই থাকলো বাংলাদেশ। ৩ খেলায় ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অ্যাডিলেড ওভালের ম্যাচে ওপেনার সৌম্য সরকারের পরিবর্তে পেসার শরিফুল ইসলামকে নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
প্রথম ওভারে দুর্দান্ত লাইন-লেন্থে ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলকে চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভার থেকে মাত্র ১ রান নিতে পারেন রাহুল। ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে উইকেট শিকারের উপলক্ষ তৈরি করেছিলেন তাসকিন। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগে রোহিতের দেয়া ক্যাচ ফেলেন হাসান। অতীতে এমনভাবে জীবন পেয়ে, বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিলেন রোহিত।
রোহিতের সহজ ক্যাচ ফেলে হতাশ হলেও তবে দ্রুতই বাংলাদেশকে আনন্দে মাতান হাসান।
চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই রোহিতকে বিদায় সাজ ঘরে পাঠান তিনি । অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আপার কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ইয়াসির আলিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৮ বলে ২ রান করা রোহিত।
রোহিতের বিদায়ে চাপে পড়া ভারত পাওয়ার-প্লেতে ৩৭ রান পায়। পাওয়া-প্লের পর রান রেট বাড়ান রাহুল ও বিরাট কোহলি। শরিফুলের করা নবম ওভারে ২৪ রান নেন রাহুল-কোহলি।
সাকিবের করা দশম ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে এবারের আসরে প্রথম ও টি-টোয়েন্টিতে ২১তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রাহুল। পরের বলে লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মুস্তাফিজকে ক্যাচ দেন রাহুল। ফলে মৃত্যু ঘটে তার ৩২ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংসের। দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি-রাহুল ৩৭ বলে ৬৭ রান যোগ করেন।
দলীয় ৭৮ রানে রাহুলের বিদায়ে উইকেটে এসে মারমুখী ব্যাট চালান সূর্যকুমার যাদব। ৪টি চারে ১৬ বলে ৩০ রান তুলেন সাকিবের স্টাম্পের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন সূর্য।
পাঁচ নম্বরে নামা হার্দিক পান্ডিয়াকে ৫ রানের বেশি করতে দেননি হাসান। নিজের তৃতীয় ওভারে প্রথম বলে পান্ডিয়াকে শিকার করেন হাসান। হাসানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ইয়াসিরকে ক্যাচ দেন পান্ডিয়া।
পান্ডিয়ার মত দ্রুত বিদায় নেন দিনেশ কার্তিকও। ৫ বলে ৭ রান করে সাকিবের থ্রোতে রান আউট হন কার্তিক। কার্তিকের আউটের আগে ৩৭ বলে টি-টোয়েন্টিতে ৩৬তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন কোহলি। এবারের আসরে চার ম্যাচে এটি ছিল তার তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি ।
১৯তম ওভারের শুরুতে অক্ষর প্যাটেলকে শিকার করেন হাসান। ওভারের শেষ দুই বলে চার-ছক্কা মারেন কোহলি। শরিফুলের করা শেষ ওভারে রবীচন্দ্রন অশি^নের মারা ১টি করে চার-ছয়ে ১৪ রান পায় ভারত। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৪ রান করে ভারত।
৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ বলে ৬৪ রান তুলে অপরাজিত থাকেন কোহলি। এই ইনিংস খেলার পথে শ্রীলংকার মাহেলা জয়াবর্ধনেকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক হন কোহলি। ২৩ ইনিংসে কোহলির রান ১০৬৫। ৩১ ইনিংসে ১০১৬ রান করেছিলেন জয়াবর্ধনে। ৬ বলে অপরাজিত ১৩ রান করেন অশি^ন।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ৪৭ রানে ৩ উইকেট নেন হাসান। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন সাকিব। এতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদির পাশে বসলেন সাকিব। সাকিব-সাউদির শিকার এখন ১২৭ উইকেট।
টানা স্পেলে ৪ ওভার বল করে ১৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন তাসকিন।এ ছাড়া ৪ ওভার বল করে শরিফুল ৫৭ ও মুস্তাফিজ ৩১ রান দিয়ে উইকেটের দেখা পাননি।
১৮৫ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ওভার থেকেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন গত ১০ ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মত ওপেনিংয়ে নামা লিটন দাস। অর্শদ্বীপের ওভারে ৩টি চারে ১২ রান তুলেন তিনি। ভুবেনশ^রের পরের ওভারে লিটনের ১টি ছয় ও ২টি চারে ১৬ রান পায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কায়মুখোমুখি হওযা ২১তম বলে টি-টোয়েন্টিতে অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেনলিটন। লিটন ঝড়ে পাওয়ার-প্লেতে ৬০ রান তুলে বাংলাদেশ। এ সময় আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ১২ বলে ৪ রানে দাঁড়িয়ে।
৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৬৬। এরপর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। বৃষ্টি আইনে এ সময় ১৭ রানে এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ।
৪০ মিনিট পর খেলা শুরু হলে বৃষ্টি আইনে ১৬ ওভারে ১৫১ রানের নতুন টার্গেট পায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৯ ওভারে ৮৫ রান করতে হবে টাইগারদের।
খেলার শুরু পর দ্বিতীয় বলে রান আউট হন লিটন। ডিপ মিড উইকেট থেকে রাহুলের সরাসরি থ্রোতে লিটনের দুর্দান্ত ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। আউট হওয়ার আগে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ বলে ২২২ স্ট্রাইক রেটে ৬০ রান করেন লিটন।
দলীয় ৬৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটনের বিদায়ের ওভারে খোলস তেকে বেড়িয়ে প্রথম বাউন্ডারি মারেন শান্ত। পরের ওভারে ছক্কাও মারেন শান্ত। দশম ওভারে সামির প্রথম বলে লং-অনে সূর্যকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ২৫ বলে ২১ রান করাশান্ত। তিনি।
অশি^নের করা ১১তম ওভারে সাকিবের ২টি চারে ১১ রান পায় বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ৫ ওভারে টাইগারদের সামনে জয়ের সমীকরন ৫২ রান।
১২তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বোলিংএ এসে আফিফ-সাকিবকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান অর্শদ্বীপ। দু’জনই ছক্কা মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দিয়ে ক্যাচ আউট হন। আফিফ ৫ বলে ৩ ও সাকিব ২টি চারে ১২ বলে করেন ১৩ রান।
আর্শদীপের জোড়া আঘাতের সাথে তাল মিলিয়ে ১৩তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত বল করতে এসে ২ উইকেট তুলে নেন পান্ডিয়াও। ইয়াসিরকে ১ ও মোসাদ্দেককে ৬ রানে বিদায় করেন পান্ডিয়া। ১২ ও ১৩তম ওভারে ৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর ১৪তম ওভারে ১২ ও ১৫তম ওভারে ১১ রান পায় বাংলাদেশ। এসময় নুরুল ১টি চার ও তাসকিন ১টি চার-ছয় মারেন। শেষ ওভারে ২০ রানের সমীকরন নামিয়ে আনেন তারা।
এমন অবস্থায় অর্শদ্বীপের প্রথম বলে ১ রান আসার পর দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন নুরুল। পরের দুই বলে ২ রান নেন নুুরুল। পঞ্চম বলে চার মারেন তিনি। ম্যাচ টাই’র জন্য শেষ বলে ছক্কার দরকার ছিলো। শেষ বলে ১ রান নিতে পারেন নুরুল। শেষ পর্যন্ত ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান করে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল। ৭ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ১২ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন। ভারতের অর্শদ্বীপ ৩৮ রানে ও পান্ডিয়া ২৮ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন কোহলি।
আগামী ৬ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলবে ভারত।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
ভারত ইনিংস :
রাহুল ক মুস্তাফিজ ব সাকিব ৫০
রোহি ক ইয়াসির ব হাসান ২
কোহলি অপরাজিত ৬৪
সূর্যকুমার বোল্ড ব সাকিব ৩০
পান্ডিয়া ক ইয়াসির ব হাসান ৫
কার্তিক রান আউট (সাকিব/শরিফুল) ৭
প্যাটেল ক সাকিব ব হাসান ৭
অশি^ন অপরাজিত ১৩
অতি (লে বা-১, নো-৩, ও-২) ৬
মোট (৬ উইকেট, ২০ ওভার) ১৮৪
উইকেট পতন : ১/১১ (রোহিত), ২/৭৮ (রাহুল), ৩/১১৬ (সূর্যকুমার), ৪/১৩০ (পান্ডিয়া), ৫/১৫০ (কার্তিক), ৬/১৫৭ (প্যাটেল)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৪-১-১৫-০,
মোসাদ্দেক : ৪-০-৫৭-০ (ও-২, নো-১),
হাসান : ৪-০-৪৭-৩ (নো-১),
মুস্তাফিজুর : ৪-০-৩১-০,
সাকিব : ৪-০-৩৩-২।
বাংলাদেশ ইনিংস :
শান্ত ক সূর্য ব সামি ২১
লিটন রান আউট (রাহুল) ৬০
সাকিব ক হুদা ব অর্শদ্বীপ ১৩
আফিফ ক সূর্য ব অর্শদ্বীপ ৩
ইয়াসির ক আর্শদীপ ব পান্ডিয়া ১
নুরুল অপরাজিত ২৫
মোসাদ্দেক বোল্ড ব পান্ডিয়া ৬
তাসকিন অপরাজিত ১২
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-২) ৪
মোট (৬ উইকেট, ১৬ ওভার) ১৪৫
উইকেট পতন : ১/৬৮ (লিটন), ২/৮৪ (শান্ত), ৩/৯৯ (আফিফ), ৪/১০০ (সাকিব), ৫/১০২ (ইয়াসির), ৬/১০৮ (মোসাদ্দেক)।
ভারত বোলিং :
ভুবেনশ^র : ৩-০-২৭-০,
অর্শদ্বীপ : ৪-০-৩৮-২,
সামি : ৩-০-২৫-১,
প্যাটেল : ১-০-৬-০,
অশি^ন : ২-০-১৯-০ (ও-১),
পান্ডিয়া : ৩-০-২৮-২।
ফল : বৃষ্টি আইনে ভারত ৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।