স্টাফ রিপোর্টার॥ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্বামীর মৃত্যুর পর তিন পরিবারের মধ্যে সম্পত্তিগত বিরোধকে কেন্দ্র করে চলছে দখল, মামলা ও অবরুদ্ধের মত নেক্কারজনক ঘটনা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ”প্রতিপক্ষরা আমার বাড়ী দখল করলে, মামলার আশ্রয় নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে বাইরে থেকে আমাদের তালা মেরে অবরুদ্ধ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।” ট্রিপল নাইনে” ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করলেও সম্পত্তিগত বিরোধের কারণে দেওয়ানী আদালতের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির পরামর্শ দেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় কাগজ, দলিল ও তথ্যমতে , স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে ৩৫৩৩ নং রেজিস্ট্রি হেবা দলিল মূলে একতলা ভবনসহ ৩৩ শতক জমি ৩য় স্ত্রী জয়তুন নেছা, পুত্র মাহফুজুল শাওন ও কন্যা ফাতেমাতুজ জোহরাকে দিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী জয়তুন নেছা ও ছেলে শাওন বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর দু:খিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত হারুন অর রশিদ ৩টি বিবাহ করেছেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি তিন স্ত্রীকেই আলাদা আলাদাভাবে হেবা দলিল মূলে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। প্রত্যেক ঘরে সস্তান থাকলেও ১ম স্ত্রী মারা গেলে, ২য় ও ৩য় স্ত্রী জীবিত রয়েছেন। তিনি ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর শুরু হয় ১ম-২য় পরিবারের সাথে ৩য় পরিবারের সম্পত্তিগত দ্বন্দ। ভুক্তভোগী ৩য় স্ত্রী জয়তুন নেছার অভিযোগ, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর পরই আমার নামীয় ভবনটি প্রতিপক্ষরা জোরপূর্বক দখল করে ডিস ও ওয়াইফাইয়ের কন্ট্রোল রুমের অফিস করেছে। আদালতে মামলা করে ঘরে প্রবেশ করলে গত সোম ও মঙ্গলবার (১৯ ও ২০ জুন) দিবালোকে প্রতিপক্ষরা ঘরের বাইরে গেইটে তালা মেরে অবরূদ্ধ করে হামকি-ধমকি দিতে থাকে। তারা বেপরোয়া হওয়ায় ভয়ে এলাকার কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায় না। “ট্রিপল নাইনে” ফোন দিলে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করলেও আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। প্রশাসনের কাছে তারা বিচার ও জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানান।
প্রতিপক্ষের তানহা বলেন, তৃতীয় পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধের কথা এড়িয়ে গিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয়রা জানান, এলাকার গন্যমান্য ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বসে সমস্যা সমাধান করলে উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হতো। এমনকি এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ঠিক থাকতো।
১১নং চর দুখিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজ বলেন, মৃত হারুন অর রশিদ এই পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। কিছুদিন পূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন। তবে তিনি ৩টি বিয়ে করেছেন। ১ম স্ত্রী মারা গেলেও ২য় ও ৩য় স্ত্রী জীবিত রয়েছেন। ৩য় স্ত্রীর সাথে ২য় পরিবারের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমরা বিক্ষিপ্তভাবে শুনেছি তাদের মধ্যে ঝামেলা ও মামলার কথা। বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান ও পিবিআই এর কাছে তদন্ত আছে। তার পরেও উভয়পক্ষ পরিষদে আসলে এলাকার মুরব্বি ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে দীঘ দিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধটা মিমাংসা করে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টার থাকবে।
ফরিদগঞ্জ ধানার ওসি মো:আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি জমি সংক্রান্ত বিরোধ। সাবেক চেয়ারম্যান হারুন সাহেবের ৩টি পরিবার ছিল। তাই তাদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ পাঠালে গিয়ে জানতে পারে, একজনের ঘরে আরেকজন ঢুকে পরেছে। এই নিয়েই চলছে বিরোধ। এই নিয়ে আজকেও অপরপক্ষ একটি অভিযোগ দিয়েছে। বর্তমানে পাওয়া অভিযোগ ২টি তদন্ত করছি। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সম্পত্তিগত বিরোধের কারণে উভয়পক্ষকে দেওয়ানী আদালতের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি।