শনিবার ৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ দুপুর ১:২৭

29.4 C
Bangladesh
শনিবার, নভেম্বর ৮, ২০২৫
spot_imgspot_img

শনিবার ৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৩শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ১৬ই জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি ১৬ই জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি দুপুর ১:২৭

চাঁদপুরে আর্থিক দৈন্যতা ও মাটির সংকটে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে


স্টাফ রিপোর্টার॥ চাঁদপুরের মৃৎ শিল্পীরা আর্থিক দৈন্যতা, মাটির সংকট ও কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারনে ধীরে ধীরে এই পেশা থেকে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় তা এখন বিলুপ্তির পথে। মৃৎশিল্পীদের অভিমত তাদের তৈরিকৃত মালামাল বর্তমানে খুব কম কিনিবিকি হচ্ছে। তাই বছরের পর বছরজীবন-জীবিকার জন্য মৃৎ শিল্প পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের হাড়ি-পাতিল, মটকা, কলস, ফুলের টব, খেলনার খুবই কদর ছিল। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় প্লাষ্টিক সামগ্রীর কারনে এই মৃৎশিল্প এখন প্রায় বিপন্ন। বংশ পরম্পরায় যারা এই পেশা ধরে রেখেছেন, তাদের সংসার জীবন অতি কষ্টেই চলছে। মাটির তৈরি মালামাল ঠিকমত তৈরী ও সঠিক দাম না পাওয়ায় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্তেও তারা সন্তানদের ঠিকমত পড়াশুনা করাতে পারছে না। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অনেকে বাপ-দাদার এই পেশাকে পাল্টাতে পারছে না। আবার কেউ কেউ বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন।
হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুরে মৃৎশিল্পী শিলা রানী পাল ও সুচিত্রা পালের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্লষ্টিক সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার কারণে এই শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। শত কষ্টের মাঝেও এখানে তারা ৪’টি পরিবার টিকে আছে। তারা অন্য কাজ করতে অভ্যস্ত নয় বলেই, বাপ-দাদার এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। বর্তমানে মাটির দাম তিন গুন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পরিবহন খরচও তিনগুল বেড়েছে। এজন্য কুমিল্লার বিজয়পুর, ফরিদগঞ্জের গল্লাক, মানুরী থেকে তৈরী মাটির সামগ্রী ক্রয় করে। তাদের স্বামীরা তা ভারে নিয়ে ফেরী করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে থাকে। এতে যা কিছু আয় হয় তা দিয়েই কোনরকমে তারা সংসার চালায়।
মৃৎশিল্পী পরেশ পাল জানান, আমরা বংশ পরস্পরায় এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে মাটির তৈরির সামগ্রীর তেমন চাহিদা নেই। তবে বৈশাখী মেলায় কিছু খেলনা সামগ্রী বিক্রি হয় বলে খেলনা সামগ্রী বানাই। এছাড়া সারাবছর ফুলের টব আর কিছু দধির পাতিল বিক্রি করে কোন রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছি। আবার মাটির দাম বেশী হওয়ায় জমির মালিকরাও ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করতে আগ্রহী। ইটভাটা মালিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা মাটি কিনতে পারছি না। এখানে আমাদের বংশের অনেকেই বাড়ি-জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে। তার মধ্যে আমরা ৪টি পরিবার মৃৎশিল্প কাজ নিয়ে জড়িয়ে আছি। আবার অনেকে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছে। আমাদের পরিবারের দু’জনে একচালা টিনের বারান্দায় বসে মাটির তৈরী জিনিসপত্র বানাচ্ছেন। পাশেই অন্যরা মাটির জিনিসে সাজ ও জিনিসগুলো রৌদ্রে শুকাচ্ছে। শুকানো জিনিসগুলো আবার কেউ ঘরের আঙ্গিনায় সাজিয়ে রাখছেন। তাদের এই ঐতিহ্যের সংগ্রাম চলমান।
৫নং সদর হাজীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানিয়া বলেন, মৃৎ শিল্পীদের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন। এদেও ব্যাপারে ইউএনও এবং এমপি মহোদয়ের সাথে আলাপ করে মাটি প্রাপ্তির সমস্যার জন্য প্রকল্প দিয়ে পর্যায়ক্রমে সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টা থাকবে বলে জানান।
চাঁদপুর বিসিক জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদরে ১০ জন, শাহারাস্তী ২০জন, হাজীগঞ্জ ৪জন, ফরিদগঞ্জ ৬জন মৃৎ শিল্পের কারিগর রয়েছেন। মাটি তৈরি মালামালের ধরণ পাল্টানোর প্রয়োজন আর এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা। মৃৎ শিল্পিদের নিয়ে আরো সম্প্রতি আপডেট জরিপ করার চিন্তা রয়েছে। বিপন্ন প্রায় এশিল্পের কারিগরদের টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

2,181FansLike
3,912FollowersFollow
22,700SubscribersSubscribe

-advertisement-

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ সংবাদ