ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি: শিশুকালে পিতার মৃত্যুর পর মায়ের সাথে কোলে চড়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাব্দেরগাঁও গ্রামে আসেন শিশু মো. মিলন। মায়ের জ্বীয়ের কাজের বিনিময় নামে মাত্র বেঁচে থাকলেও অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে না পাড়লেও মায়ের আদর স্নেহে থাকা মিলনের বয়স বর্তমানে ৩৬ বছর। ৮ বছর পূর্বে করেছেন বিয়ে, দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ও এক পুত্র সন্তানের জনক তিনি। ছোটকাল থেকেই প্যাডেলের রিকশা চালাতেন তিনি। প্যাডেলের রিকশায় যাত্রী উঠতে না চাওয়ায় সম্প্রতি তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশাটিতে ব্যাটারি সংযুক্ত করেছেন। রিকশা চালিয়ে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি বৃদ্ধ মা আফিয়া বেগম, স্ত্রী জোস্না বেগম, ৭ বছরের শিশু কন্যা মারিয়া আক্তার ও ছেলে কাউসার হোসেনকে নিয়ে চলছিল তাঁর সংসার। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দিনে রিকশা চালিয়ে রাতে ঘরের সামনে চার্জে রেখে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ফজরের নামাজের জন্য উঠে দেখেন রিকশাটি নেই। রাতে যে কোন সময় চোরের দল রিকশাটি নিয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে রিকশাটি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। জীবিকার একমাত্র উৎস রিকশাটি চুরি হওয়ায় গত দুইদিন যাবৎ অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তার।
খবর পেয়ে ১৯ জানুয়ারি (রবিবার) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়বড়ে দোচালা টিনের ঘরটির সামনে পরিবারের সদস্যরা সবাই বসে আছে। মিলনের বৃদ্ধা মা আফিয়া বেগম কান্না কাটি করছেন ছেলে মিলনের রিকশাটি চুরি হওয়ায়।
খোলা আকাশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা মিলনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আগে পায়ে প্যাডেলের মাধ্যমে রিকশা চালাতাম, এতে যাত্রী কমে যাওয়ায় নিজের জমানো কিছু টাকা ও কোডেক এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রিকশাটিতে মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়েছি। দিনে ৪ শত থেকে ৫ শত টাকা রোজগার করে কিস্তির টাকা দেওয়ার পাশাপাশি ও দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির সময় মাসহ পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে চলতাম। কিন্তু আমার জীবিকার উৎস রিকশাটি চুরি হয়ে যাওয়ায় জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি অন্য কোন কাজ করতে পারিনা, ঘরে টাকা না থাকায় রান্না হয়নি।
প্রতিবেশি মিজানুর রহমান বলেন, ছোট থেকে দেখে আসছি মিলন রিকশা চালিয়ে তাঁর মা ও পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করতো। কিন্তু তাঁর এই রিকশাটি যাওয়ায় অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জেনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চুরিসহ নানান অপরাধের প্রবনতা কমিয়ে আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।




