স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুরে চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে জাতীয় মাছ ইলিশ। চাঁদপুর সহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ডিকেটে বছর জুড়ে ইলিশের মূল্যে উর্ধ্বগতি থাকে। তবে প্রশাসন কর্তৃক ইলিশের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন পদ্মা-মেঘনায় নানা কারণে ইলিশের প্রাপ্যতা কম। এরপর দাম কমানো হলে জেলেরা ইলিশ শিকারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
গত ১৭ জুন ইলিশের দাম নির্ধারণ নিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এরপরই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে ইলিশের সরবরাহ খুবই কম। তন্মধ্যে প্রশাসন দাম নির্ধারণের কথা শুনে মেনে নিতে পারছে না ঘাটের ব্যবসায়ীরা। ইলিশের দাম নির্ধারণ করলে সরবরাহ আরো কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
শান্তি ফিস আড়তের সত্ত্বাধিকারী সম্রাট ব্যাপারী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি জেলা প্রশাসন ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। দাম নির্ধারণ করলে বিক্রি করা সম্ভব না। খরচ এবং সরবরাহের উপর দাম নির্ধারণ হয়। প্রশাসন যদি দাম নির্ধারণ করে, তাহলে ঘাটে আর ইলিশ আসবে না। মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হলে কারেন্ট জাল বন্ধ করতে হবে। আর কারেন্ট জাল থাকলে চার আঙুল পরিমান ফাঁক নির্ধারণ করে দিলে, শুধু বড় মাছ ধরা পড়বে। জালের ফাঁক ছোট হলে জাটকাসহ সব দেশীয় মাছ নিধন হয়।
মেসার্স আনোয়ার হোসেন আড়তে ব্যবসায়ী মনছুর আহমেদ বলেন, আড়তে এখন বড় ইলিশ আছে। ছোট আকারের ইলিশ কম। তবে দাম কেজিতে ২শ”/৩শ” টাকা কমেছে। আজকের বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩শ” থেকে ২৫শ” টাকা। দেড় কেজি ওজনের ২৭শ” থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ৫শ” থেকে ৬শ” গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬শ” খেকে ১৭শ” টাকা। ইলিশ কম পেয়ে জেলেরা এমনিতেই লোকসানের মুখে। দাম নির্ধারণ করলে ইলিশ শিকারে তারা আগ্রহ হারাবে।
ইলিশ ক্রেতা জাহাঙ্গীর গাজী বলেন, বেশ কয়েক বছর ইলিশের দাম বাড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। কি কারণে দাম বাড়ে আমাদের জানা নেই। ইলিশ উৎপাদনে জেলে কিংবা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হয় না। আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। তাহলে কেন ইলিশের দাম বাড়বে প্রশ্ন এই ক্রেতার। তিনি সিন্ডিকেট ভেঙে ইলিশের দাম নির্ধারণ করাই যৌক্তিক বলে মনে করেন।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, প্রশাসন থেকে ইলিশের যে দাম নির্ধারণ করতে চাচ্ছে, তা আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। কারণ কাঁচামালের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি হয় না। সরবরাহের উপর নির্ভর করে দাম বাড়বে/কমবে। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া। কারণ হঠাৎ করে দাম নির্ধারণ করলে ব্যবসায়ীরা মেনে নিবে না। আগে যেখানে ইলিশ সরবরাহ হতো ৫শ” থেকে এক হাজার মণ। এখন এক-দেড়শো মণ ইলিশ আড়তে আসে না।
চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সভাপতি আব্দুল বারি জমাদার মানিক বলেন, এভাবে ইলিশের মূল্য নির্ধারণ না করে, কিভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে সরকারের প্রদক্ষেন নেয়া উচিৎ। আমরা বিগত তিন বছর দেখে আসছি ইলিশের উৎপাদন কমছে। উৎপাদন কেন কমছে এই বিষয়ে গবেষণা বাড়ানো প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরসহ দেশের ১০/১২ জেলায় ইলিশ ধরা পড়ে ও ক্রয়-বিক্রয় হয়। আমরা মনে করছি চাঁদপুরে অংশীজনদের নিয়ে ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেই, তখন এই ইলিশ অন্য জেলায় গিয়ে বিক্রি হবে। এরই ভিত্তিতে আমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। ইলিশের বাজার মূল্য যাতে করে সিন্ডিকেটের খপ্পরে না পড়ে এবং উচ্চ মূল্য না হয়।




