হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি: হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় শত শত গ্রাহকের কোটি টাকার সঞ্চয় নিয়ে উধাও হয়ে গেছে যুবধারা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির চেয়ারম্যান জুলহাস মিয়া চারটি শাখা বন্ধ করে নিজের বাড়িঘর বিক্রি করে সপরিবারে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বাকিলা বাজার, রাজারগাঁও বাজার, বাবুরহাট ও চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় সমিতির অফিসগুলোতে তালা ঝুলতে দেখা যায়। প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক অফিসের সামনে এসে ভিড় করছেন। অনেকেই হাহাকার ও কান্নাকাটি করে আবার ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলহাস মিয়ার ছবি ছড়িয়ে তার সন্ধান চেয়ে পোস্টার, ফেসবুক পোস্ট ও পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রাহকদের সঞ্চয় বই সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পর নগদ অর্থ ও লভ্যাংশের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। একাধিক গ্রাহক জানিয়েছেন, কেউ এক লাখ, কেউ চার লাখ, কেউবা ১০-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রেখেছিলেন। এক নারী বলেন, “আমি ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। এখন কিছুই বুঝে পাচ্ছি না। কতবার গিয়েছি, শুধু আশ্বাস।”
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, আত্মগোপনের আগে জুলহাস মিয়া বাকিলা বাজারের অফিসসংলগ্ন একটি দোকান ২৮ লাখ টাকায় এবং সন্না রোডের ৫ তলা একটি ভবন আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর তিনি এলাকা ছাড়েন। এমনকি তার বাবা-মাও গ্রামের নিজ বাড়ি ছেড়েছেন।
বাবুরহাট শাখার এক গ্রাহক জানান, “টানা কয়েক মাস ধরেই আমরা টাকা চাইছি। প্রথমে কাগজপত্র নিল, পরে অফিস বন্ধ করে পালিয়ে গেল। এখন কোনো খোঁজ নেই।”
এদিকে চাঁদপুর কোর্টে চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার সমিতির পক্ষ থেকে জুলহাসের নামে প্রতারণার অভিযোগে দুটি মামলা (৭৫ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির) চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের একটি বড় অংশ থানায় সমিতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, “জুলহাস আগে থেকেই পরিকল্পনা করেই গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমাদের সঞ্চয় বইগুলোও সে নিয়ে গেছে।”
বহু চেষ্টার পর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জুলহাস মিয়া দাবি করেন, “আমি আত্মগোপনে যাইনি। গ্রাহকদের টাকার চাপ ও হয়রানির কারণে দূরে আছি। আমার স্টাফদের মারধর করা হয়েছে। সবার টাকা মাঠে বিনিয়োগ করা। রোলিং না হলে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। যদি আমাকে নিরাপত্তা ও সময় দেওয়া হয়, আমি টাকা পরিশোধ করব।”
তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। তাদের অনুরোধ, “যদি জুলহাস সত্যিই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে প্রকাশ্যে এসে আমাদের টাকা ফেরত দিন। নইলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”




